ফুড পয়জনিং কি, লক্ষণ ও প্রতিকার

আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারবেন যে, ফুড পয়েজনিং কি (What is food poisoning). ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ গুলো কি কি। সেই সাথে যদি আপনার এই ধরনের ফুড পয়জনিং হয়। তাহলে কিভাবে আপনি ফুড পয়জনিং এর প্রতিকার করবেন। এর সমস্ত বিষয় গুলো নিয়ে আজকে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে।

ফুড পয়জনিং কি?

বিভিন্ন সময় আমরা আমাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খাবার খাই। তো এই ফুড পয়জনিং হলো এক ধরনের খাদ্য জনিত সমস্যা। অর্থাৎ যখন আপনি কোন খাবার গ্রহণ করবেন। এবং সেই খাবার গুলো যখন আপনার পাকস্থলীর মধ্যে যাবে। তখন এক ধরনের বিষ ক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। যার ফলে একজন ব্যক্তি আসলে এই ধরনের ফুড পয়জনিং সমস্যায় ভুগে থাকে। সহজ কথায় বলতে গেলে, আমরা যেসব খাবার খাই। সেই খাবার গুলোর মধ্যে যদি বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা পরজীবী বিদ্যমান থাকে। তাহলে কিন্তু সেই খাবার গুলো একবারে দূষিত হয়ে যাবে। এবং এই খাবার গুলো গ্রহণ করার পরে একজন মানুষের মধ্যে যে অসুস্থতা দেখা যায়। তাকে বলা হয়ে থাকে ফুড পয়জনিং।

ফুড পয়জনিং কেন হয়?

যদি আপনার মনে প্রশ্ন জেগে থাকে যে, ফুড পয়জনিং কেন হয়। তাহলে আমি আপনাকে বলব যে, এই ধরনের অসুস্থতা হওয়ার মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। আমরা বিভিন্ন সময় নিজের অজান্তে বাসি খাবার কিংবা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার খাই। তখন কিন্তু আমাদের এই ধরনের ফুড পয়জনিং সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সাথে যখন আমরা কোথাও ঘুরতে যাই। তখন বাইরের খোলা জায়গার খাবার খেতে অনেক পছন্দ করি। মূলত এই ধরনের খাবার গুলো খাওয়া একেবারেই সমীচীন নয়। কারণ এই ধরনের খোলা, বাসি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার খেলে। আমাদের ফুড পয়জনিং এর সমস্যা দেখা যায়।

ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ

কোন একজন ব্যক্তি আসলে এই ধরনের ফুড পয়জনিং হয়েছে কিনা। তা আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, যদি আপনার আগে থেকেই ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকে। কেননা একজন ব্যক্তি যদি খাবার গ্রহণ করার পরে বারবার বমি করে। অথবা সেই ব্যক্তি টি যদি বারবার পাতলা পায়খানা করে। তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, এটা মূলত ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ। তো এগুলো ছাড়াও ফুড পয়জনিং আরো অনেক এর লক্ষণ রয়েছে যেমন:

  1. কোন ব্যক্তির যদি ফুড পয়জনিং হয়। তাহলে সেই ব্যক্তি খুব ঘন ঘন বমি করবে।
  2. সেই সাথে ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত ব্যক্তির পেটের মধ্যে ব্যথা শুরু হবে। এই ব্যথা কখনো মৃদু আবার কখনো তীব্র হতে পারে।
  3. অনেক সময় দেখা যায় যে, কোন কোন ফুড পয়জনিং এ অসুস্থ হওয়া ব্যক্তির শরীরে প্রচুর পরিমাণে জ্বর লক্ষ্য করা যায়।
  4. যখন কোন একজন ব্যক্তি ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত হয়। তখন সেই ব্যক্তি খুব ঘন ঘন পায়খানা করবে। এবং তার পায়খানা অনেক পাতলা হবে।

তো আপনি অথবা আপনার কোন পরিচিত ব্যক্তি যখন কোন কিছু খাবার পরে এই ধরনের লক্ষণ গুলো দেখতে পান। তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে এটা হল ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ। যদিও বা এই সমস্যার জন্য ডক্টরের কাছে যাওয়া টা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে আপনি নিজে থেকেই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং হলে করনীয়?

যখন কোন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে ফুড পয়জনিং এর সমস্যা দেখা যায়। তখন সেই মানুষ এর মধ্যে যে সহ্য করার ক্ষমতায় থাকবে। সেটা কিন্তু একটি ছোট বাচ্চার মধ্যে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আর সে কারণেই যখন কোন ছোট বাচ্চার ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ দেখা যায়। তখন আমরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। এবং সেই সময় আমরা ভাবতে থাকি যে, বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং হলে করণীয় কি। 

তো এই ধরনের ফুড পয়জনিং এর সমস্যা হলে ডক্টরের শরণাপন্ন হতেই হবে বিষয়টা আসলে কেমন নয়। বরং এ ধরনের অসুস্থতা নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে আপনি যদি আপনার বাচ্চার খুব অবনতি লক্ষ্য করতে পারেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আর আপনার ঘরে থাকা ছোট বাচ্চাদের যেন এই ধরনের ফুড পয়জনিং সমস্যা না হয়। সেজন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে গুলো হল:

  1. যখন আপনি আপনার শিশু কে খাবার খাওয়াবেন। তখন অবশ্যই আপনার নিজের হাত ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
  2. খাওয়ার জন্য যখন বাজার থেকে শাক সবজি বা ফলমূল নিয়ে আসবেন। সে গুলো অবশ্যই পানিতে ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন।
  3. যখন আপনি রান্না করবেন, তখন আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন।
  4. যদি আপনি আপনার বাচ্চা কে খাবার খাওয়ান। তাহলে অবশ্যই সেই খাবার আগে থেকেই ভালো করে গরম করে রাখবেন।

একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার বাচ্চার ফুড পয়জনিং প্রতিরোধ করার জন্য যে সকল কাজ করার দরকার। তা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং আপনি অবশ্যই এই বিষয় গুলোর দিকে যথেষ্ট পরিমাণে খেয়াল রাখবেন। যাতে করে আপনার বাচ্চার ফুড পয়জনিং সমস্যা না হয়।

ফুড পয়জনিং এর ঔষধ?

যখন আপনি কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে ফুড পয়জনিং এর সমস্যা দেখতে পারবেন। তখন আসলে হতাশ হওয়ার মতো কোনো কিছু নেই। বরং এ ধরনের অসুস্থতা নিজে থেকে সেরে যায়। তবে ঘটনা ক্রমে যদি ফুড পয়জনিং হওয়ার পরে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক লক্ষ্য করা যায়। তাহলে অবশ্যই আপনাকে দ্রুততার সাথে ডক্টরের কাছে যেতে হবে। আর যদি সেরকম কিছু না হয়, তাহলে আপনি ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে। খাবারের স্যালাইন, শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়াতে পারবেন। আর এ গুলো খাওয়ার পরে ফুড পয়জনিং রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির মধ্যে অনেকটা সুস্থতা লক্ষ্য করা যাবে।

ফুড পয়জনিং এর চিকিৎসা

যেহেতু উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পেরেছেন যে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরে এই ধরনের ফুড পয়জনিং সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। সেহেতু আপনাকে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে। খাবারের মধ্যে থাকা সেই বিষাক্ত পদার্থ গুলো যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকস্থলী থেকে বের হয়ে আসবে। ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির বমি বমি ভাব কিংবা ঘনঘন পাতলা পায়খানা হবে। আর এই ধরনের সমস্যা গুলো মূলত এক অথবা দুই দিনের মধ্যে সেরে যায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুড পয়জনিং সেরে যেতে তিন দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে এই ধরনের অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা করার খুব বেশি একটা প্রয়োজন নেই। বরং আপনি ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে একজন ফুড পয়জনিং হওয়া ব্যক্তি কে সুস্থ করে তুলতে পারবেন।

ফুড পয়জনিং হলে কি খাওয়া যাবে?

এখন হয়তোবা অনেকের মনে একটি প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে যে। ফুড পয়জনিং হলে কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবেনা। তো আপনার মনে যদি এই ধরনের প্রশ্ন জেগে থাকে। তাহলে আমি আপনাকে বলব যে, আপনি যেভাবে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করেন। ঠিক সেভাবেই নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করবেন। তবে আপনার মধ্যে যদি ফুড পয়জনিং এর সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাইরের খাবার খাওয়া একবারে বন্ধ করে দিতে হবে। এবং চলমান সময়ে আপনি যে খাবার গুলো খাবেন। সে গুলো যেন কোনো ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি কিংবা বাসি খাবার না হয়। সেদিকে যথেষ্ট পরিমাণে খেয়াল রাখবেন।

ফুড পয়জনিং এর ঘরোয়া চিকিৎসা

বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি আপনার ফুড পয়জনিং এর অসুস্থতা কে দূর করতে পারবেন। প্রথমত আপনি ডাবের পানি, সরবত অথবা স্যালাইন খেতে পারেন। এগুলো খেলে আপনি অনেকটাই সুস্থতা বোধ করবেন। এর পাশাপাশি আপনি আদা কুচি কুচি করে কেটে তার সাথে কয়েক ফোঁটা মধু দিয়ে একসঙ্গে খেতে পারেন। যদি আপনার বাসায় কালো জিরার গুড়া থাকে। তাহলে পানির সাথে সেই কালোজিরা মিশিয়ে খেতে পারবেন। তাহলে আপনার পেটের ব্যথা অনেকটাই কমে আসবে। আর একটা কথা বলে রাখা ভালো যে। ফুড পয়জনিং এর ক্ষেত্রে আপনি যদি তুলসী পাতা বেটে, মধু দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আপনার ফুড পয়জনিং সমস্যা খুব দ্রুত চলে যাবে।

শেষকথা

বর্তমান সময়ে ফুড পয়জনিং সমস্যা খুব পরিচিত। আর সে কারণে আমরা অনেকেই জানতে চাই যে। ফুড পয়জনিং কি এবং ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ গুলো কি কি। তো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাকে সেই বিষয় গুলো জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই সাথে ফুড পয়জনিং এর প্রতিকার সম্পর্কেও বিস্তারিত বলেছি। আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এবং এই ধরনের হেল্পফুল তথ্য পেতে হলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন।

Scroll to Top